Recent in Technology

সংসদ বিলুপ্ত করে সরকারকে এখনই পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

প্রতিবেদক,ঢাকা
প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২৩
দেশ বাঁচাতে তারুণ্যের সমাবেশ |ছবি সংগৃহীত

——— নিরপেক্ষ সরকার চাই ———

সংসদ বিলুপ্ত করে সরকারকে এখনই পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে বিশ্বাস করা যায় না। একটি নিরপেক্ষ সরকার চাই। সেটি তত্ত্বাবধায়ক কিংবা নিরপেক্ষ, যে নামেই বলা হোক। সেই সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।’

বুধবার, জুন ১৪, ২০২৩, বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের কাজীর দেউড়ি এলাকায় ‘দেশ বাঁচাতে তারুণ্যের সমাবেশে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন। সমাবেশের আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল। পর্যায়ক্রমে দেশের অন্য বিভাগীয় শহরে এই সমাবেশ হবে। ‘তরুণ প্রজন্ম দেব ভোট, ভোটের জন্য যুদ্ধ হোক’ স্লোগান সমাবেশের মূল প্রতিপাদ্য রাখা হয়েছে।

বুধবার, জুন ১৪, ২০২৩, চট্টগ্রামে ছিল প্রথম সমাবেশ। এই সমাবেশে চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলা থেকে নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। বিভাগীয় তারুণ্যের সমাবেশ উপলক্ষে বিভিন্ন জেলা থেকে নেতা-কর্মীরা বাসে করে গতকাল সকাল থেকে চট্টগ্রাম নগরে বিভিন্ন স্থানে জড়ো হন। পরে বিকেলে মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে যান। বেলা তিনটায় শুরু হওয়া সমাবেশ শেষ হয় বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে।

সমাবেশে আসা তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশকে উদ্ধারে, মানুষকে রক্ষার জন্য সবাইকে এক করতে হবে। এই দেশকে রক্ষা করার দায়িত্ব তরুণ প্রজন্মের। তরুণেরা এগিয়ে এলে দেশের মানুষের রুটিরুজির ব্যবস্থা হবে। ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে।

কাজীর দেউড়ি মোড়ে লরি দিয়ে অস্থায়ী মঞ্চ নির্মাণ করা হয়। সমাবেশে তরুণ প্রজন্মের পাশাপাশি বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা যোগ দেন। তাঁদের হাতে সুষ্ঠু নির্বাচন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধসহ বিভিন্ন দাবিসংবলিত ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড ছিল। সমাবেশস্থলেও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি বারবার উচ্চারিত হয়েছে।

নির্বাচন প্রসঙ্গে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনের উদাহরণ টেনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গাজীপুরে জাহাঙ্গীরের (আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত জাহাঙ্গীর আলম) মায়ের কাছে হেরে গেছে। যখন দেখল বরিশালে চরমোনাই পীরের কাছে হেরে যাবে, তখন ইভিএমে কারসাজি করে ভোট নিয়ে গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতির প্রসঙ্গ তুলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তাঁরা (আওয়ামী লীগের নেতারা) বলছেন, ভিসা নীতি ভয় পান না। কিন্তু এমন ভয় পেয়েছেন যে তাঁদের হাঁটু কাঁপতে শুরু করেছে। কেননা সবাই বিদেশে টাকা পাচার করেছেন। এবার যদি ভোটে কারচুপি করে, দিনের ভোট রাতে করে—তাহলে রেহাই নেই।

বিকেলে কাজীর দেউড়ি মোড় ঘিরে সমাবেশ চলাকালে নগরের ওয়াসা মোড়, লালখান বাজার মোড়, লাভ লেন, এসএস খালেদ রোড পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটারজুড়ে নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি ছিল। তাঁদের বেশির ভাগেরই মাথায় ছিল লাল-সবুজ ও হলুদ টুপি। প্ল্যাকার্ড ফেস্টুনের পাশাপাশি সমাবেশস্থলে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে বেশ কিছু ব্যানার প্রদর্শন করা হয়।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন জানিয়ে সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘তিনি (খালেদা জিয়া) অত্যন্ত অসুস্থ। তাঁকে কারাগারে অনেক দিন আটক করে রাখা হয়েছিল। আমরা বারবার বলেছি তাঁকে মুক্তি দিন। আমরা জানি না সেখানে তাঁকে স্লো পয়জনিং করা হয়েছে কি না? কারণ, এখন তিনি যে রকম অসুস্থ হয়েছেন, তা হওয়ার কথা নয়।’

এ সময় আওয়ামী লীগ সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ শুধু ভোট চুরি করেনি, সম্পদ চুরি করেছে। ব্যাংকগুলোও চুরি করে খালি করে দেওয়া হয়েছে। এই রকম চোর ক্ষমতায় থাকলে বাংলাদেশের ক্ষতি হবে। বিদেশি পত্র-পত্রিকায়ও তা বলা হচ্ছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খড়্গ ঝুলিয়ে দেওয়ায় সাংবাদিকেরা আজ লিখতে পারছেন না বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, সত্য কথা লিখলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার করছে। আলোকচিত্রী শহিদুল আলম নির্যাতিত হয়েছেন। প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম ও শামসুজ্জামানকেও কারাগারে যেতে হয়েছে। সাগর-রুনি হত্যার কোনো ক্লু বের করতে পারেনি সরকার।

সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী আওয়ামী লীগের এক নেতার ‘খেলা হবে’ প্রসঙ্গ টেনে বলেন, খেলা শেষ। এবার বাড়ি চলে যান। তারা বলছে খেলা হবে। খেলা কার সঙ্গে হবে। শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না।

গতকালের সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন। তিনি বলেন, তরুণ প্রজন্ম ভোট দিতে পারেনি। তাঁদের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে।

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, বরকত উল্লাহ, মোহাম্মদ শাহজাহান, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, আবদুল আউয়াল মিন্টু, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম, নগর বিএনপির আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন, সদস্যসচিব আবুল হাশেম, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, নগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ প্রমুখ।

চট্টগ্রাম থেকে শুরু হওয়া তারুণ্যের সমাবেশ শেষ হবে আগামী ২৯ জুলাই রাজধানীর নয়াপল্টনে। এর আগে ১৭ জুন বগুড়ায়, ৭ জুলাই খুলনায়, ১৫ জুলাই বরিশালে ও ২২ জুলাই সিলেটে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
 

Ad Code

Responsive Advertisement