ছবি: নাঈম আলী/ সংবাদ একাত্তর
বিএনপিসহ আরও প্রায় ৩৬টি রাজনৈতিক দল এই ১ দফা আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেও জানান তিনি।
আজ বুধবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বর্তমান সরকারের পদত্যাগের দাবিতে ১ দফা আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একইসঙ্গে, ১৮ জুলাই সারাদেশের জেলা-মহানগরে এ দাবিতে পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হয়।
১৮ জুলাই রাজধানীতে ঢাকায় গাবতলী থেকে যাত্রাবাড়ি পর্যন্ত পদযাত্রা কর্মসূচি পালিত হবে। এছাড়া, ১৯ তারিখ উত্তরা থেকে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক পর্যন্ত আরেকটি পদযাত্রা হবে।
সমাবেশের প্রধান অতিথি- বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব ঘোষণা দিয়ে সরকারকে পদত্যাগের আহ্বান জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমাদের একটাই দাবি, এই সরকারের পতন এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন'।
বর্তমান সংসদ বিলুপ্ত করা এবং নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান-ও ১ দফার অন্তর্ভুক্ত। বিএনপিসহ আরও প্রায় ৩৬টি রাজনৈতিক দল এই ১ দফা আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেও জানান তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক ঐতিহাসিক মূহুর্তে আজকের ঘোষণা। এ ঘোষণা জাতিকে মুক্ত করার, জাতির হারানো গণতন্ত্র ফিরে পাওয়া ঘোষণা'।
'গত ১৮ বছরে তারা দেশকে ধ্বংস করেছে, লুটপাট করেছে। বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী, লাকসামের সাবেক এমপি হিরু, বিএনপি নেতা পারভেজ চৌধুরী আলমসহ শতাধিক নেতাকর্মীকে গুম করেছে। সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে খুন করেছে। অগণিত মানুষকে পঙ্গু করেছে। আজকে সমগ্র বাংলাদেশ ঐক্যবদ্ধ, শেখ হাসিনাকে স্মরণ করে দিতে চাই – দিনে দিনে বাড়িয়েছ দেনা, শোধ দিতে হবে এবার। আজ বাংলাদেশের মানুষের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে'।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, 'তারা বিচারবিভাগকে ধবংস করেছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে আজ ৮ মাস কারাগারে, তাকে আদালত থেকেও জামিন দেয়া হচ্ছে না'।
এ সরকার বাংলাদেশ বিরোধী সরকার, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব-বিরোধী সরকার মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, 'আজ ১০ বছর হয়ে গেল তারা রোহিঙ্গাদের সমস্যার সমাধান করতে পারছে না, আসলে সে সমাধানের যোগ্যতাও তাদের নেই'।
তিনি আরও বলেন, 'বিচারপতি খায়রুল হকের বিচার হওয়া উচিত, কারণ তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে রায় দিয়েছেন। অবসর গ্রহণের ১৬ মাস পরে রায়ে সই করেছেন- দেশে নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধবংস করেছেন খায়রুল হক'।
বুধবার দুপুরের পরেই সমাবেশে ছড়িয়ে পড়ে মতিঝিল,নটরডেম কলেজ, আরামবাগ, ফকিরাপুল, শান্তিনগর, মালিবাগ, মৌচাক, কাকরাইল, নাইটিঙ্গেল, মৎস ভবন, সেগুনবাগিচা, বিজয় নগর, পল্টন মোড় পর্যন্ত।
সমাবেশে তার বক্তব্যে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, 'আওয়ামী লীগের সমাবেশে আজ শান্তি সমাবেশের নামে শান্তি মিটিং করছে, তাদের সমাবেশে এত কম লোক, এটাকে সমাবেশ নয়, মিটিং বলা যায়। বরং আজকের বিএনপি সমাবেশের অংশ প্রায় আ. লীগের সমাবেশের কাছাকাছি চলে গেছে। ভবিষ্যতেও তাদের সমাবেশে লোক হবে না'। তিনি বলেন, আপনারা যতই শান্তি মিছিল করেন, বিএনপির কিছুই করতে পারবেন না।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, 'তাদের সাথে কোন আপোষ নাই, বাংলাদেশে শেখ হাসিনার অধীনে কোন নির্বাচন হবে না'।
তিনি সমাবেশে আসার সময় পথে পথে নেতাকর্মীদের বহনকারী বাস আটকে তাদের গ্রেপ্তার ও হয়রানির অভিযোগ করেন।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, 'এ সরকার দেশে গণতন্ত্রকে হত্যা করে বাকশাল কায়েম করেছে, মানবাধিকার হরণ করে জঙ্গলের শাসন করেছে। বাংলাদেশে মানুষের সমস্ত অধিকার হরণ করছে আওয়ামী লীগ। তাই আমাদের ১ দফা দাবি, আওয়ামী লীগকে বিদায় নিতে হবে'।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, 'আজকের ঘোষণা সঙ্গে মিল পাচ্ছি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমানের ঘোষণার সঙ্গে।'
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে আমান উল্লাহ আমান বলেন, 'দু-এক মাসের মধ্যে এই সরকারের পতন হবে। আজকের ১ দফা কর্মসূচি ঘোষণার পর- বাংলাদেশ হবে আন্দোলনের দেশ, ঢাকা হবে আন্দোলনের নগরী'।
বিএনপির এই নেতা ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের ১ দফা আন্দোলনের জন্য নেতাকর্মীদের শপথ বাক্য পাঠ করান।
Social Plugin