Recent in Technology

মেট্রোরেল স্টেশনে ছেলের জন্মকে ‘মিরাকল’ বললেন সুকান্ত

 মানসুরা হোসাইন,ঢাকা

প্রকাশ: ১২ জানুয়ারি ২০২৩, ২১: ০৩

নবজাতক রাজত্ব|ছবি: সংগৃহীত

সুকান্ত সাহা ও সোনিয়া রানী রায়ের প্রায় চার বছর বয়সী প্রথম সন্তানের নাম রাজবীর সাহা। দ্বিতীয় সন্তান ছেলে হলে প্রথম সন্তানের সঙ্গে মিল রেখে রাজত্ব সাহা নাম রাখবেন, তা আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। আজ বৃহস্পতিবার এই রাজত্ব সাহার জন্ম হয়েছে রাজধানীর আগারগাঁও মেট্রোরেল স্টেশনে। রাজত্ব বর্তমানে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নবজাতকদের বিশেষ পরিচর্যা কেন্দ্রে (এনআইএসইউ) ভর্তি আছে। রাজত্বের মা ভালো আছেন।আজ বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে মুঠোফোনে কথা হয় রাজত্বের বাবা সুকান্ত সাহার সঙ্গে। ফোনে প্রতিবেদকের পরিচয় জেনে তিনি প্রথমেই বললেন, ‘আজ মেট্রোস্টেশনে আমার ছেলের জন্ম হয়েছে। বুঝতেই পারছেন আমাদের অবস্থাটা। তবে স্টেশনে নামার পর কাউকে ডাকতে হয়নি, সাহায্য চাইতে হয়নি। মেট্রোস্টেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও ছুটে আসেন। আজ যে সেবা পেয়েছি, তা দেখে মনে হয়েছে, আমি ইউরোপ বা আমেরিকার মতো কোনো একটা দেশে আছি। আগারগাঁও স্টেশনে ফার্স্ট এইড সেন্টারের মতো কিছু আছে, তা–ই তো জানা ছিল না। ছেলের জন্মটাকে “মিরাকল” বলেই মনে হচ্ছে। সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’


মা-বাবার সঙ্গে রাজত্ব|ছবি: সংগৃহীত

আজ সকাল পৌনে নয়টার দিকে জন্ম হয় রাজত্বের। উত্তরার দক্ষিণখান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুকান্ত সাহা বললেন, স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে ধানমন্ডিতে যাওয়ার জন্যই তাঁরা বের হয়েছিলেন। চিকিৎসকের দেওয়া সম্ভাব্য তারিখ হিসেবে আজই সন্তান প্রসবের তারিখ ছিল। সবচেয়ে বড় কথা, তাঁরা যে বগিতে ছিলেন, সেই বগিতে ঢাকা শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক ফেরদৌসী আক্তারও ছিলেন।ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সুকান্ত সাহা বলেন, ‘মেট্রো থেকে নামতে নামতে স্ত্রী বেশি ব্যথা হচ্ছে বলে জানান। ট্রেন থেকে কোলে করে স্ত্রীকে নামাই। লিফট দিয়ে দোতলায় নামি। স্টেশনে স্কাউটের সদস্যরা ছিলেন। চিকিৎসক ফেরদৌসী আক্তারসহ সবাই মিলে স্ত্রীকে নিয়ে গেলেন মেডিকেল সেন্টারে। পাঁচ থেকে সাত মিনিটের মাথায় শুনি, ছেলের জন্ম হয়েছে। আজ বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারত।’ সুকান্ত জানালেন, ৯ জানুয়ারিও মেট্রোতে করেই স্ত্রীকে চিকিৎসকের ফলোআপের জন্য ধানমন্ডিতে নিয়ে গিয়েছিলেন।পরিবার নিয়ে সুকান্ত সাহা উত্তরায় থাকেন। তিনি জানালেন, অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার শুরু থেকেই স্ত্রী ধানমন্ডিতে বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক হাফিজুর রহমানের তত্ত্বাবধানে ছিলেন। চিকিৎসক স্বাভাবিক প্রসবের আশ্বাস দিয়েছিলেন। আজ ভোর থেকে স্ত্রীর হালকা ব্যথার কথা জানান। তবে বেশি ব্যথা নেই বলে কিছুটা দেরি করে হাসপাতালে ভর্তি হতে চাইছিলেন। তবে ব্যথা একটু বাড়তে থাকায় তাঁরা একটি গাড়ি ভাড়া করেন ধানমন্ডির হাসপাতালে যাওয়ার জন্য। গাড়িতে চড়ে ম্যাপে দেখেন, প্রচণ্ড যানজট। তখন সময় বাঁচানোর জন্য মেট্রোতে আগারগাঁও যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মেট্রোস্টেশনে নবজাতকের জন্মের খবর ছড়িয়ে পড়লে এই নবজাতকের নাম কী হবে, তা নিয়ে ট্রলও শুরু হয়। সুকান্ত সাহা হাসতে হাসতে বললেন, ছেলের নাম তো আগেই ঠিক করে রাখা হয়েছে।গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর মেট্রোরেলের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরদিন ২৯ ডিসেম্বর যাত্রী পরিবহন শুরু করে মেট্রোরেল। তখন থেকে উত্তরা উত্তর (দিয়াবাড়ি) থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত সরাসরি চলাচল করছে মেট্রোরেল। ২৫ জানুয়ারি থেকে পল্লবী স্টেশনে থামবে মেট্রোরেল।


সোনিয়ার প্রসবে সহায়তা করতে এগিয়ে আসেন চিকিৎসক ফেরদৌসী আক্তার|ছবি: সংগৃহীত

মেট্রোরেল চালুর পর থেকে তা নিয়ে মানুষের উৎসাহের কমতি নেই। এক মাসও পার হয়নি, তার আগেই মেট্রোরেলের স্টেশনে নবজাতকের জন্ম, নবজাতক ও মায়ের বড় কোনো বিপদ না হওয়ার বিষয়টিকেও মানুষ ইতিবাচকভাবেই দেখছেন।আজ সকালে আগারগাঁও স্টেশনেই উপস্থিত ছিলেন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপক মাহফুজুর রহমান। সকালে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, স্টেশনে নামার সময়ই অন্তঃসত্ত্বা সোনিয়া রানী রায়ের ব্যথা বাড়ে। স্টেশনে থাকা স্কাউট দলের সদস্য সোনিয়া রানী দাশসহ অন্যরা এগিয়ে আসেন। এই মাকে স্টেশনের ফার্স্ট এইড সেন্টারে নেওয়া হয়। অন্যদিকে মেট্রোরেলের যাত্রী চিকিৎসক ফেরদৌসী আক্তার সঙ্গে থাকায় সুবিধা হয়। সবার সহযোগিতায় মা ছেলের জন্ম দেন। তারপর মা ও ছেলেকে ধানমন্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়।বিকেলে কথা হয় ঢাকা শিশু হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ফেরদৌসী আক্তারের সঙ্গে। অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় জন্ম নেওয়া নবজাতক ও মা সুস্থ আছেন, তার জন্য তিনিও সৃষ্টিকর্তা এবং মেট্রোরেলের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন। বললেন, আজকের ঘটনা তাঁর চিকিৎসক জীবনকে সার্থক করেছে।ফেরদৌসী আক্তার জানালেন, মেট্রোরেল চালুর পর থেকে তিনি উত্তরা থেকে আগারগাঁওয়ে শিশু হাসপাতালে মেট্রোরেলেই যাতায়াত করেন। আজ তিনি যে কেবিনে ছিলেন, ওই কেবিনেই সুকান্ত সাহা ও তাঁর স্ত্রী ছিলেন। বললেন, ‘সমস্যা বুঝতে পেরে সোনিয়ার কাছে পানি ভাঙা শুরু হয়েছে কি না, তা জানতে চাইছিলাম। মনে হচ্ছিল, সন্তান প্রসবের জন্য হয়তো কিছুটা সময় হাতে আছে। স্টেশনে আমিও দ্বিতীয় তলায় নামি। তারপরই শুনি চিৎকার। দায়িত্ববোধের জায়গা থেকেই এগিয়ে যাই। ততক্ষণে বাচ্চার মাথা প্রায় বের হয়ে গেছে। হাতের কাছে যা ছিল, তাই দিয়েই ডেলিভারির কাজ করি। ভাগ্য ভালো, নাড়িটা আলাদা করে কিছু দিয়ে কাটতে হয়নি, তা ছিঁড়ে গিয়েছিল।’নবজাতকের অবস্থা সম্পর্কে চিকিৎসক ফেরদৌসী আক্তার জানালেন, নবজাতকের জন্মের সময় অক্সিজেনের খানিকটা ঘাটতি ছিল। তাকে কান্না করানোর চেষ্টা করা হয়, কিছুটা কান্নাও করে।


স্কাউট দলের সদস্য সোনিয়ার কোলে রাজত্ব|ছবি: সংগৃহীত

অ্যাম্বুলেন্সে করে একটি বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে মা ও নবজাতককে হস্তান্তর করে পরে ফেরদৌসী আক্তার নিজের কাজে ফেরেন।ফেরদৌসী আক্তার বললেন, প্রতিটি প্রসবই পরিকল্পিত প্রসব হওয়া জরুরি। মা ও বাবাকে আগেই সব পরিকল্পনামাফিক ঠিক করে রাখতে হবে। আজকের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাচ্চার মাথাটা বের হয়ে নিচে পড়ে যেতে পারত। ঝুঁকি ছিল প্রচণ্ড। তাই এই মায়ের আরও আগেই হাসপাতালে উপস্থিত থাকা অথবা উত্তরা থেকে এত দূর না এসে সেখানেই দ্রুত কোনো হাসপাতালে ভর্তি হওয়া দরকার ছিল।

Ad Code

Responsive Advertisement